শিক্ষকদের সম্মান করার মানদণ্ড থাকা উচিৎ নয়কি?

Reading Time: 8 minutes

আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখিঃ শিক্ষক ও গুরুজনদের কথা সবসময় মানতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে। তাঁদের সাথে কখনই তর্ক করতে নেই।

কিন্তু এই কথা হুবহু অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিলে ব্যক্তিজীবনে এবং পলিসি পর্যায়ে বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে।

কীভাবে?

প্রথম প্রসঙ্গঃ শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান

একথা ঠিক যে, যেসব পেশায় শুধু টাকা ও প্রোডাক্টের লেনদেন হয় যেমন মুদি দোকানদারি – সেসবের চাইতে শিক্ষকতার পেশার প্রভাব সুদূরবিস্তারি। যেমন একজন প্রথম শ্রেণীর শিশুর মস্তিষ্কে, মনে, বা আচরণে শিক্ষক যে শিক্ষা, চেতনা, বা মূল্যবোধ প্রবেশ করিয়ে দেন তা ঐ শিশুর বাকি জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখে।

একটা জাতিকে অনুন্নত অবস্থান থেকে উন্নত অবস্থায় নিতে ভালো শিক্ষকদের অবশ্যই প্রয়োজন।

তাই লেনদেন নির্ভর পেশার চাইতে শিক্ষকতার পেশায় আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়।

এতে উপকার এই যে, শিক্ষকেরা আরো সচেতন ও আন্তরিকভাবে স্টুডেন্টদের পড়াবেন।

এজন্যেই ছোটবেলায় সরকারি বাংলা মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থার ‘আমার বই’ নামের বইয়ে ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ নামের কবিতা পেয়েছিলাম।

কিন্তু, এই মর্যাদা কি ঢালাওভাবে প্রতিটি শিক্ষকদেরই দেয়া প্রয়োজন?

প্রথম প্রশ্নঃ সবাই কি প্যাশন থেকেই শিক্ষক হয়?

শিক্ষকের শেখাতে আসার পেছনে উদ্দেশ্য কি, সেটা বোঝা খুব দরকার। সবাই শেখানোর প্যাশন থেকে শিক্ষক হয় না। 

কেউ হয় পেটের দায়ে। পেশা হিসেবে হয়তো এর চাইতে ভালো অপশন ছিলো না। 

তাতে তো কারো অসুবিধা নেই। অনেক শিক্ষকই শুধু পেশা হিসেবে শুরু করলেও পরে নিজ দায়িত্বে দক্ষ ও কেয়ারিং শিক্ষক হয়ে ওঠেন। 

উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী শিক্ষকদের বৈশিষ্ট্যঃ

  • ধৈর্য (সবর)
  • সহানুভূতি ও সমবেদনা (রহমা)
  • বিনয় (তাওয়াদু)
  • জ্ঞান ও প্রজ্ঞা (ইলম এবং হিকমাহ)
  • ন্যায়পরায়ণতা ও সততা (আদল ও সিদক)
  • মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও নমনীয়তা
  • কৃতজ্ঞতা (শুকর)

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী শিক্ষকদের বৈশিষ্ট্যঃ

  • শান্তি
  • আত্মনিয়ন্ত্রণ
  • সহানুভূতি
  • অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা

এই ধরণের আচরণ কি সেই শিক্ষকেরা করেছিলেন, যারা রাজনীতির গোলাম হয়ে তাদের স্টুডেন্টদের লিস্ট তৈরি করে সরকারকে দিচ্ছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত সন্ত্রাস, যত অত্যাচার হয়ে এসেছে ছাত্র রাজনীতির মোড়কে, সেগুলিকে আরো শক্তিশালী করে তুলছিলেন যারা, তারাও কি আদতে শিক্ষক?

বুয়েটে আবরার হত্যার পর ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা কি কিছু শিক্ষক করেননি? বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে কিছু শিক্ষক কি সচেষ্ট ছিলেন না? সাস্টের ভিসি ফরিদ উদ্দিনের মত মানুষেরা কি শিক্ষকতা প্যাশন থেকে করছিলেন, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার লোভ থেকে?

এনাদেরকে প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে – এই কথা তোলার আগে, এনাদের সম্মানই প্রাপ্য কিনা, সেটাই তো একটা কঠিন প্রশ্ন!

দ্বিতীয় প্রশ্নঃ সব শিক্ষকই কি ভালো মানুষ?

এমন একটা ক্যাটাগরির শিক্ষকদের কথা এখন বলব, যারা সংখ্যায় অনেক কম কিন্তু তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যাবে না। তারা শিক্ষক সেজে স্কুল,কলেজ, ভার্সিটি, বা প্রাইভেট কোচিং করায় কিন্তু ভেতরে একটা নরপিশাচ পালন করছেন। তারা কেউ মানুষ হিসেবে অতি হিংস্র, বা অতি লোভী, কিংবা যৌনতার বিষয়ে আগ্রাসী লাগামহীন এক জন্তু। 

পরিমলের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এরকম পার্ভার্ট শিক্ষকদের কি সম্মান দেখানো সম্ভব? 

প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত যত শিক্ষক – এরা কি সম্মান পাবার যোগ্য?

স্টুডেন্টের পরিবার ভিন্ন রাজনৈতিক দল করেন বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী – এজন্যে স্টুডেন্টকে সব সময় অপমান করতে থাকা, তাকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়া শিক্ষক – তারা কি সম্মান পাবার যোগ্য?

বাসায় প্রাইভেট পড়াতে এসে যৌন হয়রানি করেছে – এমন শিক্ষকেরা কি সম্মান পাবার যোগ্য?

সম্মানিত শিক্ষকদের দলে এইসব মানুষকে স্থান দিলে, শিক্ষকতা পেশায় আছে বলেই, চোখ বুজে এদেরকে বিশ্বাস করলে, এরা ছাত্র ছাত্রীদের সারা জীবনের জন্যে ট্রমা দিয়ে দিতে পারে – শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে। 

আরেকদল টিচার দেখেছি, নিজের কাছে কোচিং করলে সাতখুন মাফ অথচ যারা কোচিং করতো না তাদের বেধড়ক মারধর করতো। যাদের মারধর করলে বাবা মা কমপ্লেন করে দিবে, তাদের খুব খারাপ ভাবে অপমান করতো। এইসব টিচাররাই স্কুলের বুলি হয়ে উঠেন, এমনকি ক্লাসের বুলিদেরও পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখেছি। বলাই বাহুল্য, এই বুলিরা তার কাছে প্রাইভেট পড়তো।

এনাদের কখনোই ভালো মানুষ বা ভালো শিক্ষক বলা যাবে কি?  

তৃতীয় প্রশ্নঃ একজন শিক্ষক যে বিষয়ে দক্ষ, তার সেই বিষয়ের মতামতকে গুরুত্ব দিবো, স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কেমিস্ট্রির টিচার ভূগোল নিয়ে মতামত দেন, তখন তো একটু খতিয়ে দেখতে হবে, তাই না?

দেখুন, বাংলাদেশে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকার, উঁচুমানের শিক্ষক আছেন। তাঁদের জ্ঞানের পরিধি বিশাল। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে, তাঁরা যেই বিষয়ে আন্ডারগ্র্যাড ও মাস্টার্স করেছেন, এর বাইরের গণ্ডিতে তাঁদের এক্সপার্টিজ এর প্রমাণ ছাড়া, আমরা কেন তাঁদের প্রতিটি কথাতেই অন্ধবিশ্বাস করব?

প্লিজ খেয়াল করে দেখুন, প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলে শিক্ষক সংকটের জন্যে এক শিক্ষক কয়েকটি বিষয় পড়ান। আমি এর বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ও জনসংখ্যা অনুযায়ী বর্তমানে এই ব্যবস্থাই টিকিয়ে রাখতে হবে।

তাই বলে, পৃথিবীর সব রকম বিষয়েই যে এখন শিক্ষকের সর্বোচ্চ জ্ঞান থাকবে, সেই সার্টিফিকেট তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন?

আমি কানাডায় এসে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককেও পাই নি, যিনি দাবি করেছেন যে, তিনি যে বিষয়ে পিএইচডি করে এত বছর পড়াচ্ছেন, সেই বিষয়ে তিনি সব জানেন। বরং তাঁরা জ্ঞানের ভারে যেন আরো ন্যুব্জ হয়ে আছেন। যেমনটা হয় ফলদায়ী গাছের ক্ষেত্রে।

করণীয়ঃ

তাই প্রথম থেকেই, এই শিক্ষক কি মানুষ না মানুষরূপী জন্তু, তা নিয়োগের আগেই যাচাই করতে হবে। এবং সিস্টেমেটিক্যালি, রিক্রুটমেন্ট থেকে শুরু করে বার্ষিক রিভিউ প্রসেসের মাধ্যমে নরপিশাচদের শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করা বা দশকের পর দশক টিকে থাকাকে ফিল্টার আউট করতে হবে। 

এখানে ভাবা যেতে পারেঃ

১। রিক্রুটমেন্টের সময় পার্সোনালিটি টেস্ট।

২। ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক। তার বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে কোনো ধরনের যৌন হয়রানির উদাহরণ আছে কিনা তা দেখা।

৩। বার্ষিক ৩৬০- পিয়ার রিভিউ (খরচ কমানোর জন্যে, গুগল ফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী অজ্ঞাত থেকে সার্ভেতে শিক্ষককে ফিডব্যাক দিতে পারে, যা সার্ভে শুরু হবার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষকের কাছে পৌঁছানো হবে।)

৪। শিক্ষকদের কন্টিনিউয়াস লার্নিং নিশ্চিত করা, প্রতিবছর তাদের নিজস্ব লার্নিং প্ল্যান মেন্টেন করা। (তবে এইটা ইমপ্লিমেন্ট করা কঠিন হবে।)

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি ব্লগ অনুসারে শিক্ষকদের করণীয়ঃ

  • শিক্ষার্থীর পরিচয় জানুন এবং তারা কী বিষয়ে আগ্রহী তা বুঝুন।
  • কীভাবে ভালোভাবে শিখতে হয় তা মডেল করুন।
  • শিক্ষার্থীদের উপর ফোকাস করুন; সহানুভূতিশীল ব্যবহার করুন।
  • শিক্ষার্থীদের সাথে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলুন যাতে তারা আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
  • আপনার শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব সহকারে নিন।
  • তাদেরকে সুচিন্তিত এবং গভীর চিন্তার যোগ্য মানুষ হিসেবে বিবেচনা করুন।
  • পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত চিন্তা করতে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হোন।
  • শেখার প্রতি ভালবাসা রাখুন।নিজেকে মূল্যায়ন করুন এবং প্রতিফলন করুন।
  • আপনি কীভাবে যোগাযোগ করছেন তা খেয়াল করুন। কণ্ঠের সুর গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ গুরুজনের সব কথাই কি মানতে হবে?

গুরুজন – বলতে কেবল গুরু নয়, পুরো সিনিয়র সমাজ, অর্থাৎ আপনার চাইতে ১ বছরের বা কয়েক মাসের বড় এমন সবাইকেই ধরা যেতে পারে। অর্থাৎ ৯ বছরের এক ছেলের কাছে তো ১০ বছরের পিচ্চিই তো গুরুজন হয়ে ওঠে। 

এটা হয়তো ভাবতে হাস্যকর লাগছে কিন্তু কিছু প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে দেখুন, থার্ড ইয়ারের ছেলেপিলে ফার্স্ট ইয়ারের সাথে এমনভাবে কথা বলছে, যেন তাদের এরমাঝেই পিএইচডি কমপ্লিট হয়ে গেছে! এবং ফার্স্ট ইয়ারদের মোটেই কোনো কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই!

“সিজিপিএ দিয়ে কি হবে?,” “ভার্সিটি লাইফে একটা প্রেম না করলে তা আবার কিসের ভার্সিটি লাইফ?,” “৩-৪টা টিউশনি করা, নিজের খরচ নিজে চালা, পার্ট টাইম ইন্টার্নশিপ দিয়া কি হবে?” “এখনই চাকরি বাকরি নিয়ে ভাবিস কেন? প্রথম দুইটা বছর শুধু আমাদের ক্লাবে টাইম দে, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা,” ইত্যাদি নানান দৃষ্টি ভঙ্গি অনেক সিনিয়র তার জুনিয়রদের মধ্যে চাপিয়ে দেয়। অথচ ঐ জুনিয়রের জন্যে হয়তো ঐটা ভালো সাজেশন ছিলো না।  

কিন্তু অনেক জুনিয়রই মেনে নেয়, অথবা কিছু বলে না, কারণ গুরুজন বলে কথা। আর ২০২৪ এর আগস্টের আগে তো রাজনীতির ছাতার ছায়াতেই অনেকে ক্যাম্পাসে গুরু সেজে বসতো। তখন তো আরো অসম্ভব ছিলো।

কেন শিক্ষক ও গুরুজনের কথাকে যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে ভাবা উচিৎ?

এই যে শিক্ষক বা গুরুজন বলেছেন তাই মানতেই হবে, এইরকম একটা অভ্যাসে দুইটা সমস্যা হয় গুরুজনদেরঃ

এক, গুরুজনরা কোন প্রকার রিসার্চ বা Due Diligence ছাড়াই কথা বলার লাইসেন্স পেয়ে যায়। এতে তাঁদের গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেয়া কমে যায়।

দুই, গুরুজনরা তাদের জুনিয়রদের কাছ থেকে কোন প্রকার ক্রিটিক্যাল আর্গুমেন্ট পান না। এতে করে, তাদের নিজেদের জ্ঞানের ধারই কমে যায়। 

আর জুনিয়রদের ক্ষতি?

গুরুজনের কথা যদি সবসময় মানতেই হয়, এবং মুখে মুখে তর্ক নাই করতে হয়, তখন, সিনিয়র ব্যাচের একজন স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন ছাত্র তার এক বছর পরে ভর্তি হওয়া জুনিয়র ব্যাচের সবচাইতে মেধাবী ছেলে মেয়েদের চুপ করিয়ে দিতে পারে।

মেন্টাল বা ফিজিক্যাল কষ্ট থেকে শুরু করে, যৌন হয়রানি, আর্থিক ক্ষতি – এমন উদাহরণ পত্রিকায় না আসলেও, বাংলাদেশে যারাই স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা সবাই কমবেশি এমন কোনো না কোনো এবিউজিভ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি।

আর সবচেয়ে কষ্টের সিচুয়েশোন হল, বাধ্য জুনিয়র ৫-১০ বছর বুঝতে পারে, সে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এই ধরনের সম্পূর্ণ সাবমিসিভ আচরণের ফলে কীভাবে জ্ঞান অর্জন ব্যাহত হয়ঃ

একটা জিনিস খেয়াল করেন। এমন কি কখনো দেখেছেন যে, এক ব্যাচের ৯০% ছেলে মেয়ে মেধাবী আর তার পরের ব্যাচের ৫% মাত্র মেধাবী? এত বড় গ্যাপ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। যদিও কোন accurate research নাই, তবে খেয়াল করলে দেখবেন যে, প্রতি ব্যাচে ১০-২৫% ছেলে মেয়ে খুব ট্যালেন্টেড হয়। Normal Distribution এর Bell Curve এর মত, বেশিরভাগ হয় মাঝারী মানের স্টুডেন্ট, আর কিছু অংশ থাকে যারা ঝরে পড়ে কিংবা একদম নিম্নমানের Understanding ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভার্সিটি শেষ করে। 

By the way, নিম্নমানের গ্রেড কিন্তু বলছি না, নিম্নমানের understanding ও বুদ্ধিমত্তা বলছি। কারণ, ঐ স্টুডেন্টরা বাকিদের মত evolve করতে পারে নাই। কিন্তু তাদের সুযোগ এখনো আছে এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তারাও বিজয় অর্জন করতে পারবে।

এতে ঐ সিনিয়র এবং ঐ জুনিয়র দুই পক্ষেরই লস! 

কিন্তু নর্থ আমেরিকা, বা তুলনামূলকভাবে উন্নত যেকোন দেশেই যুক্তিসম্মতভাবে তর্ক করতে পারার বিশেষ মূল্য দেয়া হয়। তারা Critical Reasoning এর সঠিক চর্চার কারণে, তাদের পক্ষে বেস্ট ডিসিশন গুলি নেয়া সম্ভব হয়। তারা একটা প্রজেক্টের আইডিয়ার পাশাপাশি, এর রিস্ক, এবং রিস্ক এড়ানোর জন্যে কি কি করতে হবে তার ধারণা পায়।   

এতো গেল ইউনিভার্সিটির কথা। এখন যদি অফিসের দিকে তাকাই?

কয়টা অফিস আছে বাংলাদেশে, যেখানে বসের ভুল ধরিয়ে দেয়া সম্ভব? সেরা কর্পোরেটগুলিতেও বসের একটা ছোট্ট ভুল বুঝিয়ে দেবার জন্যে আগে ৫ টা ভালো কথা পরে ৫ টা ভালো কথার বার্গার বানিয়ে এমনভাবে বলা হয়, যেন এটা বসের ভুল ধরানো হচ্ছে না, পুরো টিমেরই ভুল হয়েছে। 

মানে, ১১ টা কথা বলে ১ টা ভুল প্রকাশ করা হয়। তাহলে Efficient Communication কিভাবে হবে?

আর এই বস তো ভেবেও নিতে পারেন, উনার কোনো ভুল হয়নাই। এটা টিমের ভুল ছিলো। তাহলে তো উনি ভবিষ্যতে আবার এমন ভুল করবেন!

হবে না, কারণ Culture eats strategy for breakfast, এবং বাংলাদেশের কালচারে মিশে আছে হাজার হাজার বছরের রাজা মহারাজা সম্রাট জাঁহাপনা কালচার। মহারাজের বিরুদ্ধে কিছু বললেই ছিলো শিরশ্ছেদের শাস্তি!

কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে কি তা দরকার আছে?  

তাও তো এমন অফিসের কথা বলছিলাম, যেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে বসের ভুল ধরে দিলেও, চাকরি চলে যায় না। কিন্তু এখন যদি সরকারি অফিসের দিকে তাকাই? সেখানে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়েছিল এই এক ‘গুরুজনের মুখে মুখে কিছু বলা যায় না’ – মাইন্ডসেটের জন্যে!  

আবার যদি পরিবারের দিকে তাকাই? কয়টা পরিবারে বাবা তার বাচ্চাদের কাছ থেকে criticism নিতে অভ্যস্ত? কয়টা পরিবার আছে যেখানে “My father knows best” এর বাইরে আমরা ভাবতে পারি? 

আশার কথা হচ্ছে, কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন। কিছু পরিবারে সন্তান ১৮-২০ হবার পর বাবা মা গুরুত্ব দিয়ে তাদের কথা শোনেন। কিছু ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে। যাঁরা এর বাইরে ভাবতে শিখেছেন, শিখিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের কারণেই অনেক বাংলাদেশি দেশে বা বিদেশে সুখী সমৃদ্ধ জীবন যাপন করছেন।

তাঁদের মত মানুষ আমাদের আরো দরকার।

যারা শুধু শোনাতে নয়, শুনতেও ইচ্ছুক। শুধু জানাতেই নয়, জানতেও ইচ্ছুক। শুধু বোঝাতেই নয়, বুঝতেও ইচ্ছুক। শুধু লিড দিতে নয়, ফলো করতেও ইচ্ছুক।

তাহলে এখন কি করণীয়ঃ

হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর বাইরে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা আজো শিক্ষকদের পা ধুইয়ে দিতে রাজি, কিন্তু তাকে যোগ্য শিক্ষক হতে হবে। ভণ্ড শিক্ষকদের জন্য অঢেল সম্মানদের দরজা বন্ধ।

[এখানে প্রশ্ন উঠে যাবে, ভণ্ড শিক্ষক কে? সেটার জন্যে আলোচনা হওয়া দরকার। আমার একার মতামত যথেষ্ট নয়।]

যদি কালচার উন্নত মানুষ হবার স্ট্র্যাটেজিকে খেয়ে ফেলে, তাহলে সেই কালচার আমাদের চাই না। গুরুজনের কথা শুনে শুনে গরীব দেশ হয়ে, উন্নত দেশের কাছ থেকে ফান্ড চেয়ে চেয়ে, মেগাপ্রজেক্টের প্ল্যান দেখিয়ে লোন নিয়ে নিয়ে দেশ কত দূরই বা আগাবে?

গুরুজনের ভালো আইডিয়া জুনিয়র নিবে। জুনিয়রের ভালো আইডিয়া সিনিয়র নিবে।

দেখেন, যুগে যুগে সেই মানুষগুলিই দ্রুত উন্নতি করে এসেছেন, যারা নিজে সিনিয়র দেখে জুনিয়রের ঠোঁট চেপে ধরেননি। তারা বেছে বেছে চালাক-চতুর, ভালোমানুষ জুনিয়র, এবং সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন। আলোচনা করেছেন। নেপোটিজম ও পলিটিক্স কম – এমন ক্লাব বা গ্রুপগুলোতে জয়েন করেছেন। 

নিজেকে মুক্তমনা রাখতে পারলে, নিজের ও আশেপাশের মানুষদের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। নিজের জুনিয়রদের তাদের বুদ্ধিমত্তা প্রমাণের সুযোগ দিলে তা দোষের কিছু না। যে আপনার চাইতে পরে পৃথিবীতে এসেছে, তাই কিছু বিষয়ে, বিশেষ করে টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সে আপনার চাইতে আপডেটেড হবার কথা। এছাড়া, যে যে বিষয়ে তার দক্ষতা আছে, সেই বিষয়গুলোতে জুনিয়র কারো কাছ থেকে শিখলে আপনি ছোট হয়ে যাবে না। 

আর যে সিনিয়র, তার আর কিছু না হলেও অভিজ্ঞতা আছে একটু বেশি। তার অপমর্যাদা না করে, তাঁর কথা শুনুন।

তবে বেছে বেছে সেই মানুষগুলিকে ফলো করুন, যারা সত্যিই জ্ঞানী। যারা সত্যিই আপনার ভালো চান। মানুষদের স্রেফ বয়সের ভার বিবেচনা করে তাঁদের পরামর্শকে মাথায় ওঠাবেন না। তাঁদের উপকার করতে কোন মানা নেই, এবং তাঁদের সাথে বেয়াদবি করারও কিছু নেই।  

সবশেষে আবারো বলবঃ

আমরা বলছি না যে, শিক্ষক বা গুরুজনকে সম্মান করা ঠিক না। অবশ্যই তাঁদের, এবং পৃথিবীর সব পেশার মানুষকেই আমাদের ন্যূনতম মর্যাদা দিতে হবে। ইংরেজিতে যাকে বলে Dignity। এবং যাঁরা সম্মানজনক কাজ করে চলেন নিয়মিত, তাঁদের বাড়তি সম্মান দিতেই হবে।

সে হিসেবে অন্য কিছু পেশার চাইতে শিক্ষকতাকে বাড়তি সম্মান দেয়ার ব্যাপারটাও যুক্তিযুক্ত। সব প্রাচীন ধ্যানধারণা কিন্তু এক্সপায়ার্ড না। কিছু প্রাচীণ ধারণা সর্বদা সার্বজনীন। যেমন কেউ অন্যের কাছে সম্মান চাইলে, তাকে নিজেকে সম্মান করতে শিখতে হবে এবং অন্যকে সম্মান দেখানো শিখতে হবে – দুটোই দরকার।

কিন্তু যে শিক্ষক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম করছেন, তাকে আমরা ছেড়ে দিতে পারিনা। এর পরিণাম তাকে ভোগ করতেই হবে। শিক্ষকতা করা মানে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স না। কারো চাইতে বয়সে বড় হবার মানেই তাকে যা খুশি তাই বলার লাইসেন্স পেয়ে গেছি – এমনটা ভাবা ঠিক না।

কিন্তু স্রেফ বয়স বা পেশার কারণে কারো কথা সাথে সাথে মেনে নিতে হবে – এমন ভাবে আমরা যাতে না চলি। সম্মান দিয়েই যুক্তিযুক্ত তর্কে প্রবেশ করতে পারি। এবং টক্সিক সিনিয়র, জুনিয়র, ও শিক্ষকদের সঙ্গ এড়িয়ে থাকতে পারি, যাদের কাছে উন্নত মানুষ হবার চাইতে প্রাচীণ ও এক্সপায়ার্ড ধ্যানধারণায় পড়ে থাকাই বেশি ভালো লাগে।

[বিঃদ্রঃ কানাডা, ইউকে, এবং বাংলাদেশে পড়াশোনার সুযোগ হবার কারণে, এই তিন জায়গার শিক্ষার ধরণ ও শিক্ষকদের আচরণের মিল ও পার্থক্য নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার পরিকল্পনা আছে। এবিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।]

GMAT এর প্রস্তুতির জন্য ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো :

Reading Time: 6 minutes

আপনার ভুলগুলো ট্র‍্যাক করুন: 

প্রস্তুতির প্রথম দিন থেকেই কোন বিষয়গুলো নিয়ে আপনার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো, কোথায় কোথায় আটকাতে হচ্ছে সেগুলোর একটা লিস্ট করে নিতে পারেন । GMAT এ বেশ কয়েক ধরনের ডিফিকাল্টি লেভেল রয়েছে, ৫০০ লেভেলের প্রশ্নগুলো যেন সহজেই সলভ করা যায় সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন । দুই একটা ক্যাটাগরির প্রশ্ন আপাতত  না ধরে অন্য প্রবলেমগুলোতে ফোকাস করার জন্য সময় বাঁচাতে পারেন। ভালো হয় এটা নিয়ে একটা জার্নাল বানিয়ে এবং নিয়মিত জার্নালিং GMAT প্রস্তুতির জন্য খুবই হেল্পফুল হবে ।

দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন :

সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ডিস্ট্র‍্যাকশনের এই যুগে আমাদের মনোযোগ এদিক ওদিক হয়েই যায়।  GMAT এক্সামে ২১০ মিনিটের একটা তীব্র ফোকাসের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে কোয়ান্টিটিভ আর ভার্বাল সেকশনের জন্য।  মনোযোগ যেন না হারায় এটা ঠিক রাখার জন্য মানে এ বিষয়টি মাথায় রেখে পড়াশোনার চেষ্টা করুন এবং পড়াশোনার জন্য আলাদা করে নেয়া সময়টায় চেষ্টা করুন ফোন বন্ধ রাখতে অথবা ফোনটা অন্য রুমে রাখতে।  সারাদিনে ছোট ছোট যেটুকু সময় বের করা যায় যেমন কোথায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বা যানবাহনে বসে যেটুক সময় পাওয়া যাচ্ছে সে সময়গুলোতে কিছু প্রশ্ন সলভ করে ফেলতে পারেন বা এ সংক্রান্ত এডুকেশনাল ভিডিও দেখে সময়টাকে আরো প্রোডাক্টিভ করতে পারেন। 

আগ্রহী ইংরেজি পাঠক হওয়ার চেষ্টা করুন : 

যদিও আমার ভার্বাল স্কোর তেমন ইম্প্রুভ করেনি , তবে আমি আমার মক টেস্টগুলোতে বেশ ভালো ফলাফল লক্ষ্য করেছিলাম যখন আমি কম্পলেক্স সেনটেন্সে ব্যবহার করে লেখা ইংরেজি আর্টিকেল পড়তাম। আমি রেকমেন্ড করব নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে আপনি “The Best American Science and Nature Writing” বই ও এ জাতীয় অন্যান্য বই পড়তে পারেন। যদি আপনি কিছু টপিক পড়তে স্ট্রাগল করেন reading comprehension এর ক্ষেত্রে, যেমন হতে পারে এস্ট্রনমি বা বায়োলজি  চেষ্টা করুন এই টপিকগুলোর উপর কমপ্লেক্স করে লেখা আর্টিকেলগুলো পড়তে। এই প্র‍্যাক্টিসটা ভার্বাল সেকশনে আপনার পারফরম্যান্স বাড়াতে খুবই সহায়ক হবে।  

পড়াশোনার মোট সময়ের ৮০% বরাদ্দ করুন প্র‍্যাক্টিসের জন্য:

যদিও GMAT প্রিপারেশনের উপর প্রচুর লেখালেখি ও ভিডিও আছে , মনে রাখবেন যে প্রচুর প্র‍্যাক্টিস করা এক্সামে ভালো করার ক্ষেত্রে খুবই দরকার । কনসেপ্ট সম্পর্কে কোনো রকম ধারণা থাকা পরীক্ষার অই সীমাবদ্ধ সময়ে যথেষ্ট না। সময়স্বল্পতার প্রেশারের মধ্য দিয়ে প্রবলেম সলভিং স্কিল বাড়িয়ে আপনার জ্ঞান ও পরীক্ষা চলাকালীন দক্ষতাকে আরো দৃঢ় করতে পারেন। 

পড়ার বিষয়গুলো গুছিয়ে নেয়া: 

 GMAT এর সেকশন অনুযায়ী ক্যাটাগরির যে ডিফারেন্স হয় সেগুলো ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন। নানা ধরনের ডিফিকাল্টি লেভেলের প্রশ্ন সলভ করার চেষ্টা করে আপনার স্ট্রেন্থ ও উইকনেস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন । অরিজিনাল GMAT Questions বা Official Guide Questions দিয়ে প্র‍্যাক্টিস করুন যেহেতু এগুলোই চূড়ান্ত এক্সামের ক্ষেত্রে আপনি কি ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন তার নির্ভরযোগ্য উদাহরণ। আর আপনার পারফরম্যান্স ও টার্গেট স্কোরের উপর ভিত্তি করে আপনার পড়াশোনার স্ট্র‍্যাটেজিকে প্রায়োরিটি দিন এবং নিয়মিত আপডেট করুন। আপনি যদি ৬০০- লেভেল স্কোর পেতে চান তবে ফোকাস করুন ৫০০ এবং ৬০০- লেভেল প্রশ্নের উপর। 

এখানে আরো কিছু টিপস দেয়া হলো যেগুলো GMAT এ সাফল্যের জন্য সহায়ক হবে

আপনার জিম্যাটের পড়াশোনা গুছিয়ে নেয়ার কিছু টিপস:

প্রশ্নের ক্যাটাগরির সাথে পরিচিত হোন: 

জিম্যাট এক্সামের প্রতিটা সেকশনেই একাধিক ক্যাটাগরির প্রশ্ন থাকে। তাই ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির প্রশ্ন সলভ করে আপনার দুর্বলতা কোথায় সেগুলো খুঁজে বের করতে পারেন, একইসাথে কোথায় আপনি ভালো করছেন সেটা সম্পর্কেও জানা থাকবে । আমি বিভিন্ন ডিফিকাল্টি লেভেলের প্রশ্ন দিয়ে রেখেছি (৫০০,৬০০, এবং৭০০) যেন আপনি এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পান। চাইলে সেগুলোও এক্সপ্লোর করে দেখতে পারেন। 

অফিশিয়াল জিম্যাট প্রশ্নের দিকে ফোকাস করুন: 

যখন প্র‍্যাক্টিস করবেন, প্র‍্যাক্টিসের ক্ষেত্রে original GMAT Questions বা Official Guide (OG) questions থেকেই প্র‍্যাক্টিস করা উচিত। কিছু কোম্পানি যারা জিম্যাট প্রিপারেশন রিলেটেড কোয়েশ্চেন পেপার বের করে তারা সেগুলো প্রমোট করার জন্য অনেক অহেতুক জটিল প্রশ্ন দিয়ে রাখে , তাই ওসব করে মাথা নষ্ট না করে Official guide থেকেই প্রশ্ন সলভ করুন ।

পড়ার স্ট্র্যাটেজি আপনার স্ট্রেন্থ এবং উইকনেসের ভিত্তিতে কাস্টমাইজ করুন:

বিভিন্ন এরিয়াগুলোতে আপনি কেমন পারফর্ম করছেন তার একটা র‍্যাঙ্কিং করা এবং প্রতিনিয়ত পড়াশোনার স্ট্র্যাটেজি পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলানো বা আপডেট করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । আমি আমার দুইটা ডিসিশন শেয়ার করছি যা আমার পারফর্ম্যান্সে খুব ইম্প্যাক্ট রেখেছিল। প্রথমত , আমার সেকেন্ড এটেম্পটের প্রিপারেশনের সময়  আমি খেয়াল করলাম আমি ভার্বাল সেকশনে কন্সিস্টেন্টলি ভাল স্কোর পাচ্ছি। তাই আমি ডিসাইড করলাম ভার্বাল সেকশন নিয়ে আর না পড়তে এবং ম্যাথ প্রবলেমগুলোতেই ফোকাস দেয়া শুরু করলাম । দ্বিতীয়ত , সেকেন্ডবারের জন্য এক্সাম দেয়ার শেষ সপ্তাহে আমি Data Sufficiency নিয়ে বেশ স্ট্রাগল করছিলাম । তাই আমি পুরো দুইদিন এটার পিছে ডেডিকেটেড করে দিলাম যেন এই এরিয়াতে আমার স্কিল ইম্প্রুভ করে । এগুলো তো মাত্র দুইটা উদাহরণ অনেকগুলোর মধ্যে যা আমাকে করতে হয়েছিল এবং যেগুলো আমাকে বেটার পারফরমেন্সে হেল্প করেছিল। আপনার অ্যাপ্রোচ যেন আপনার নীডস ফিল আপ করে এ ব্যাপারে শিউর থাকার চেষ্টা করবেন, যেন অনেক ভালো স্কোর পেতে সাহায্য করে। 

কোনো বিষয়ে ইম্প্রুভমেন্টের জন্য নানা ধরনের রিসোর্সের খোঁজ করুন :

আপনি যদি কোনো ক্যাটাগরিতে বার বার চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে থাকেন, বিভিন্ন ধরনের সোর্স চেক করলে আপনার পার্টিকুলার প্রবলেমটা বুঝতে আরো সহজ হবে যেমন রীডিং ম্যাটেরিয়ালস বা ভিডিওসহ অন্যান্য যা কিছু আছে। এখানে লক্ষ্য হলো কোনো কনসেপ্ট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে থাকা যতক্ষণ না এই এরিয়াতে আপনি কনফিডেন্ট ফিল করতে পারছেন। 

স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস :

স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা: 

আমি আসলে নিজে Manhattan Prep বা জিম্যাট প্রিপারেশনের জন্য অন্য কোনো বই ব্যবহার করিনি। কানাডায় জিম্যাটের বইয়ের দাম খুব বেশি আর আমি আমার আশেপাশে কোথাও সেকেন্ড হ্যান্ড বই পাওয়া যায় এমন কিছুর খোঁজ পাইনি। যদিও আমার মনে হয়েছে প্রিপারেশন রিলেটেড বই থাকলে হয়তো আমার প্রিপারেশন আরো ভালো হতো। 

যে টাইম ম্যানেজমেন্ট প্র‍্যাক্টিসগুলো জিম্যাট প্রিপারেশনের সবচেয়ে ভাল: 

টাইমার ব্যবহার করুন

প্রশ্ন সলভ করার সময় টাইমের ব্যাপারটা মাথায় রাখা খুব জরুরি। যে টপিকগুলো আপনি ভালো পারেন সেগুলোর প্রশ্ন এক মিনিটের মধ্যেই সলভ করার অভ্যাস করুন। যা আরো চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে সময় বাঁচাবে।

বুঝেশুনে সময় ভাগ করে নিন: 

কোয়ান্ট সেকশনের ৩১টা প্রশ্নের উত্তর করার জন্য আপনাকে সময় দেওয়া হবে ৬২ মিনিট। চেষ্টা করবেন গড়ে দুই মিনিটে এক একটা প্রশ্নের উত্তর করার। কিন্তু সাথে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে কিছু প্রশ্ন থাকে যা একটু জটিল হয়, যেগুলোর উত্তর করতে ২.৫-৩ মিনিট এমনকি ৩.৫ মিনিটও লেগে যায়। বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি প্রতি পাঁচটা প্রশ্নের জন্য ১০ মিনিট করে সময় ধরেন। 

ভার্বাল টাইমিং সাজেশন : 

ভার্বাল সেকশনের টাইমিং নিয়ে আমি নিজেও বেশ স্ট্রাগল করেছি, এটার ক্ষেত্রে আমার কোন স্ট্রং সাজেশন নেই। যদিও ৫ টা প্রশ্নের গ্রুপ করে তাতে কেমন সময় লাগতে পারে তা ভাগ করে নিলে ভালো হতে পারে এক্ষেত্রে। 

মিনিমাম ও ম্যাক্সিমাম টাইম লিমিট ঠিক করে নেয়া :

বাজে ডিসিশন এড়াতে এবং সময় অতিরিক্ত খরচ করার ট্র‍্যাপে পড়তে না চাইলে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে মিনিমাম টাইম লিমিট, যেমন – ৪০ সেকেন্ড ঠিক করে নেয়া ভালো যেন আপনি সবগুলো প্রশ্ন দেখার সময় পান। অবশ্যই একটা প্রশ্নে সর্বোচ্চ কতটুকু টাইম দিবেন সেটাও ঠিক করে রাখুন যা স্পিড ঠিক রাখতে সাহায্য করবে এক্সামে। কোনো কোনো প্রশ্ন সলভ করার ক্ষেত্রে টাইম লিমিট পার হয়ে যেতে পারে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ওভারঅল টাইম ম্যানেজমেন্টের বিষয়টা ঠিক রাখা। 

রিয়েলিস্টিক এক্সাম কন্ডিশন কেমন হবে সেটা মাথায় রাখুন: 

জিম্যাট এক্সাম দেয়ার আগে মক এক্সামগুলো দেয়া অনেক ভালো প্র‍্যাক্টিস  হতে পারে। এটা আপনাকে স্পেসিফিক টাইমিং এবং পরিস্থিতি এডাপ্ট করতে হেল্প করবে। আপনার এনার্জি আর মনোযোগের ব্যাপারেও স্বচ্ছ ধারণা দিবে। 

মক এক্সামের গুরুত্ব :

প্রথম এটেম্পট হিসেবে জিম্যাট দেয়ার আগে আমি মক টেস্ট দিয়েছিলাম MBA dot com এবং অন্যান্য ফ্রি মক সাইট থেকে। যাই হোক, আমার দ্বিতীয় এটেম্পটের ক্ষেত্রে আমি মক টেস্টগুলোর ভ্যালু বুঝতে পারি এবং ৩-৬ টার মতো মক টেস্টে ইনভেস্ট করি। যদিও টেস্টগুলো চিপ ছিল না, এগুলো ওর্থ ইট হবে যদি আপনার বাজেট থাকে এবং আপনি হাই স্কোরের টার্গেট রাখেন। কিন্তু অনেকেই এসব এক্সট্রা মক টেস্ট দেয়া ছাড়াও মেইন এক্সামে হাই স্কোর পেয়েছেন, তাই মক টেস্ট দিবেন কি দিবেন না এই ডিসিশনটা আপনার পার্সোনাল অবস্থার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি Magoosh থেকে মক টেস্ট কিনেন, তবে ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। 

পরীক্ষার দিনের অভিজ্ঞতা :

আমার পরীক্ষার দিনের অভিজ্ঞতা তাহলে বলি! আমার প্রথম এক্সামের সময় আমি একটা টেস্ট সেন্টারে গেলাম, সবকিছু ভালোমতোই আগাচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় এক্সামের সময় আমাকে জিম্যাটে এর আগে হাই স্কোর পাওয়া একজন সাজেস্ট করলেন যে এক্সামটা অনলাইনে দিতে। জানেন কি হয়েছিল, এই এডভাইসটা আমার জন্য লাইফসেভার ছিল। আমি ঘরের জামা পরেই কমফোর্টেবলি এক্সাম দিতে পেরেছি, আমার নিজের কম্পিউটারে। রেডি হওয়া এবং অপরিচিত জায়গায় এক্সাম দেয়ার ঝামেলা নার্ভের উপর চাপ ফেলতে পারে। যেহেতু জিম্যাট এক্সামে খুব শার্প এটেনশনের দরকার হয়, বাসায় বসে এক্সাম দেয়াটা আমাকে ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। 

আমার অনলাইন এক্সামের সময়, যখন আমি ভার্বাল সেকশন নিয়ে মগ্ন ছিলাম, প্রক্টর হঠাৎ করেই আমাকে ইন্টারাপ্ট করলেন এবং ওয়েবক্যাম দিয়ে পুরো রুমটা দেখাতে বললেন। স্বীকার করতে হবে যে এটা আমাকে কিছুটা হতচকিত করেছিল। কিন্তু এসব হতেই পারে, এগুলোতে বিভ্রান্ত হয়ে খেই হারালে চলবে না। আনএক্সপেক্টেড ইন্টারাপশনের জন্য প্রিপেয়ার্ড থাকলেই চলবে। 

দুইটা এক্সামের সময়ই আমি যে কাজটা করতে ভুলে গিয়েছি তা হলো, ব্রেকের সময়টার জন্য পানি এবং লাইট স্ন্যাক্স যেমন বাদাম জাতীয় কিছু রাখা। আমার প্রথম এক্সামের সময় আমি রোজা রেখেছিলাম, তাই কিছু নিতে পারিনি। কিন্তু অনলাইন এক্সামের সময় আমি পানি নিয়েছিলাম, কিন্তু স্ন্যাক্স নেয়া হয়নি। আমি এটা শিওর যে যদি আমি কিছুটা ব্রেইনফুড জাতীয় খাবার কাছে রাখতাম, তাহলে আমার জন্য আরো কমফোর্টেবল এক্সপেরিয়েন্স হতো। তাই রিফ্রশড আর ফোকাসড থাকার জন্য আমি রেকমেন্ড করবো পানি আর স্ন্যাকস জাতীয় খাবার সাথে রাখার। এটা আসলেই বেশ কাজে দিবে! 

আরেকটা নোটিস করার বিষয় হচ্ছে টেস্ট সেন্টারে যেয়ে টেস্ট দিলে আপনার স্কোর রিপোর্ট তারা সাথে সাথে পাঠিয়ে দেয়। আমার বেলায় আমি বাসায় অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার ১০ দিনের ভেতরেও অফিশিয়াল স্কোর পাইনি। অনেক সময় এটা পেতে ২০ দিনও লেগে যায়, যা আসলেই কখনো কখনো বেশ ফ্রাস্ট্রেটিং। প্রক্টর কিংবা রিভিউ কমিটি যদি কোন ধরনের ইস্যু খুঁজে পান অনলাইন এক্সামের ক্ষেত্রে, তারা আপনার এক্সাম বাতিলও করে দিতে পারেন। আমি একজনকে দেখেছিলাম পোস্ট করতে যে সে ৭১০ স্কোর পেয়েছে অনলাইন এক্সামের ক্ষেত্রে, কিন্তু পরে এটা বাতিল হয়ে যায়। তাকে আবার পরীক্ষাটা দিতে হয়েছিল। আপনার এনভায়রনমেন্ট যদি চার ঘন্টার বাধাবিঘ্নহীন এক্সাম দেয়ার জন্য আইডিয়াল না হয়, এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে অনলাইন টেস্ট দিবেন কি দিবেন না তা বিবেচনা করা উচিত। 

শেষে এটাই বলব যে, কন্সেপ্ট সম্পর্কে নিজের আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। যত বেশি পারেন প্র্যাকটিস করেন এবং পড়াশোনায় সময় দেয়াটা  আরো বাড়িয়ে দিন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এটা মনে রাখবেন যে , এই পরীক্ষাটা একটা অপরচুনিটি যা আপনার প্রবলেম সলভিং এবং এনালিটিক্যাল স্কিল বাড়িয়ে আপনার ব্রেইনকে আপগ্রেড করতে সাহায্য করবে। 

আপনার দুর্বল জায়গাগুলো ইমপ্রুভ করতে ফোকাস করুন এবং আপনার স্ট্রং এরিয়াগুলোতে আরো এফিশিয়েন্ট হওয়ার চেষ্টা করুন। আমি একান্তভাবে চাই আপনার যেন বারবার জিম্যাট এক্সাম দেওয়া না লাগে। কিন্তু প্রথম এটেম্পটে যদি এক্সাম ভাল না হয় তবে হাল ছাড়বেন না। এটা আনকমন কিছু না, অনেক মানুষই আছে যারা দুর্দান্ত স্কোর করেছিল তাদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা পঞ্চম এটেম্পটের বেলায়। হ্যা, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা যে কবারই এক্সাম দিতে যান না কেন ফিস প্রতিবার সেইমই হয়। কিন্তু মাস্টার্স ডিগ্রি বা এমবিএ এর জন্য জিম্যাট অপরিহার্য যা পরবর্তীতে আপনাকে অনেক বেটার ফাইনান্সিয়াল পজিশনে নিয়ে যাবে, তাই শেষের গোলটাই মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করুন। 

এইতো, আপনার জিম্যাট জার্নির জন্য আমার একান্ত শুভকামনা থাকলো, আপনি পারবেন! 

বৃষ্টিতে ঢাকা রিকশায়

Reading Time: 2 minutes

সকাল সকাল অফিস যাবো বলে বের হলাম। ধানমণ্ডি স্টার কাবাবের সামনে রিকশায় ওঠার পরেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ছাঁট নামলো। ধানমণ্ডি ৪ এর কাছাকাছি যেতেই তার বেগ আরো বাড়লো।

হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় সবুজ গাছেরা নড়ে উঠল। এক পলকের ফ্ল্যাশব্যাকে দেখি আমি ১৯৯৭ সালে, ক্লাস ফোরে পড়ার সময়, এই রাস্তা ধরেই যাচ্ছি গ্রিন রোডে – YWCA স্কুলে ক্লাস করতে।

তখনকার অদ্ভুত এক মায়াময় পৃথিবী ছিলো। বিটিভির প্যাকেজ নাটকে তৌকির-বিপাশা, টনি ডায়েস, আফসানা মিমি, শমী কায়সার, নোবেল, মৌ, জাহিদ হাসানদের প্রায়ই দেখা যেত রমনা পার্কের বেঞ্চে কিংবা ভেতরের চাইনিজটাতে। কপিরাইটের টেনশন না নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতো Careless Whisper।

আজকের মত কাতুকুতু দেয়া লাউড ছিলো না প্রেমের নাটকগুলি, চৌকস নায়ক-নায়িকার ছোট ছোট খুনসুটিগুলোতেই হেসে খুন হতো বাসার সবাই।

সেসব নাটকে বৃষ্টির দিনগুলো দেখতে আজকের মতই ছিল। রাস্তাঘাট একটু বিবর্ণ কিন্তু গাছগুলি গাঢ় সবুজে প্রাণবন্ত, বাতাসে মাঝে মাঝে দুলে উঠছে হাল্কা মাতালের মত। সেই নব্বই দশকের DV ক্যামেরার ঘোলা প্রিন্টের প্যাকেজ তবু নাটকগুলি আজকের HD প্রিন্টের চাইতেও মনোহর মনে হত।

আমাদের সিদ্ধেশ্বরীর রোডের বাসায়, বৃষ্টির বাতাসে, ছয় তলায় উঠে আসা অবাধ্য বাতাসের দম মন ভিজে উঠত। দুপুরবেলায় টিভিতে দেখার মত কিছু না পেয়ে তিন গোয়েন্দার কিশোর, মুসা, রবিনের সাথে সময় কাটানো হত।

সন্ধ্যায় বাবা মায়ের সাথে নাস্তার টেবিলে বসা হত। তাদের গায়ের চামড়ায় বয়সের ভাঁজের ছিটেফোঁটা নেই, বাবাকে যত শক্তিশালী, মাকে কতই মমতাময়ী মনে হত। খুশিমনে ধোঁয়া ওঠা পিঁয়াজুতে কামড় দেয়া, ছোট বোনের ভাগের পিঁয়াজু ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলত। বোতলে আটকে থাকা টমেটো কেচাপকে নানান কায়দা করে প্লেটে ঢালতে হত (বোতল উলটা করে পিছনে জোরে থাপ্পড় দিলেই একটা “থ্যাপ!” আওয়াজে বেশ কিছুটা লাল কেচাপ চ্যাটকে যেত প্লেটে)।

বাসের বাসার ক্যাসেট প্লেয়ারে ভেসে আসতো Warfaze এর “বৃষ্টি নেমেছে…”

কর্কশ, প্যাঁ-বর্গীয় একটা হর্নের সাথে হঠাৎ কানের পর্দা ধাক্কা খেলো, খেয়াল ফিরে আসলো ঢাকার ট্রাফিকে। প্রায় চলে এসেছি সূর্যের হাসি সাইনবোর্ডওয়ালা গলির কাছাকাছি। অফিসে ঢুকতেই সারাদিনের কাজের লিস্ট সামনে, হাল্কা ভেজা গাত্রে কলিগদের আগমন একে একে।

এত কাজের ভিড়েও এইটুকু স্মৃতিকে শেয়ার করার লোভ সামলানো গেলো না। বসে গেলাম ল্যাপটপে। সত্যিই অপরুপ কিছু সময় পেয়েছি শৈশবে, তাদের পাথেয় করেই আজকের পথচলা। ❤

_____

২০২৩ এ বসে ২০২১ এর এই লেখাটা পড়ে কেমন মনে কেমন যেন মোচড় দিলো। ২০২২ এ ঢাকা ছেড়ে আমি অটোয়ায়। এখানকার বৃষ্টিতে নেই সেই মোলায়েম ভাব, রাস্তায় বেজে ওঠে না কোন রিকশার টুংটাং।

সাদা বরফে ঢাকা এই দেশও হাতছানি দেয়, “আমাকে তোমার দেশ বলে মেনে নেবে?”

তা তো এখনো বলতে পারি না ঠিক করে। দেশ কি শুধু ওই বর্ডার আঁকা ১৪৭৫৭০ বর্গ কিমি এর জায়গাটুকু, নাকি ‘৭১, ‘৪৭ এর আগের হাজার হাজার বছরকেও হিসেবে আনবো, নাকি ওই বর্ডারের ভেতরে রেখা আসা মানুষগুলো, নাকি যে অতীতে আমি বেড়ে উঠেছি যে মানুষগুলোর সাথে তারা, অথবা এই সবের একটা সামষ্টিক অস্তিত্ব?

তা জানি না, অত দার্শনিকতার সময় আপাতত ঝোলায় নেই, যে ভেবে বের করব। আমি মুসাফির, সামনে পথ, মনের গভীরে এক গন্তব্যের স্বপ্ন নিয়ে চলছি। গন্তব্য না, যাত্রাটাকেই যাতে ফোকাসে রাখি।

এই বরফ বিছানো পথও সেই যাত্রার অংশ, এই পথেও সেই পাথেয় নিয়েই চলতে থাকবো। অটোয়ার কর্কশ কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ইয়ারফোনে বাজতে থাকবে ‘আজ ঝড় ঘনঘটা আনন্দ মেঘে ঢাকা’, অথবা ‘Sawan barse tarse dil’ কিংবা ‘বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি, করেছি কতই আর্তনাদ… মেঘের ডানায়, কাটিয়ে দিলাম, আমি হাজার বর্ষা রাত!’

 [ঝোলায় সময় জমলে এই টপিকের ওপর কিছু ভাবনা তর্জমা করার ইচ্ছে আছে, লেখা হয়ে গেলে এখানে লিঙ্কটা দিয়ে দিব।]

চলে গেলেন মিতু মামি

Reading Time: 3 minutes

গাঢ় কষ্টের একটা সংবাদ দিয়ে বছরটা শুরু হল।

আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস ও মোটিভেশন দেয়া মিতু মামি আর নেই। সাহিত্যানুরাগী, মিষ্টভাষী, অনেক অনেক আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল মানুষটা আমার জীবনে অনেক সিগনিফিক্যান্ট হয়ে থাকবেন।

শুরুর গল্প

ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময় চিটাগং থেকে কুমিল্লায় গিয়ে আমি খুবই চুপচাপ, ইন্ট্রোভার্টেড হয়ে গেসিলাম।

বাবা মা ডাক্তারি পেশার প্রেশারে ব্যস্ত, আমি আমার বোন এপ্রিসিয়েশন পেতাম পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর। যতটা না টাইগার প্যারেন্টিং, তার চাইতে বেশি তাদের পেশাগত দায়বদ্ধতা।
তবে এটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, পড়াশোনা করব, পরীক্ষা দেব, এরপর কিছু প্রশংসা কামাব। এরপর আবার পড়াশোনা।

মিতু মামি অনেক বড় একটা চেঞ্জ আনলেন।

আমাদের জীবনে মিতু মামির প্রবেশ

আমরা ঢাকায় আসলাম যখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। মামি মাস্টার্সের শেষ পরীক্ষা দিয়ে ঘরে ঢুকেছেন আর আমার জাকির মামার সাথে বিয়েটা হয়েছে।
বিয়ের পর মামি ঢাকার বাসায় আসলেন। এবং দুই দিন আমাকে অবজার্ভ করে রীতিমত ঘোষণা করলেন, আমি এক অসাধারণ মানুষ এবং আমার মত কাউকে নাকি তিনি কখনোই দেখেন নাই। আমি একদিন অনেক বড় কিছু করব।

পরীক্ষার রেজাল্ট ছাড়াও প্রশংসা পাওয়া যায়? চুপচাপ শান্ত বালকের চোখে পানি চলে আসে। সিদ্ধেশ্বরী রোডের ছয়তালার ফ্ল্যাটে ভেসে আসা দমকা হাওয়ায় নিজের বুকে একটা সাহস পাই, চুপি চুপি যেন বাতাসও বলছে, তুমি এক বিস্ময় বালক। হাহাহা।

বুকের ভেতর অজানা আশ্বাস, আসলেই আমাকে নিয়ে দেখা বড় বড় স্বপ্নগুলি পূরণ করতে পারবো একদিন?

একদিন অংক ক্লাসের হোমওয়ার্কে খুব কঠিন অঙ্ক থাকায়, সল্ভ করতে পারছিলাম না। মামির কাছে গেলাম। মামিও অনুতপ্ত স্বরে জানালেন, এই প্রশ্নগুলির উত্তর তাঁর কাছেও নেই। কিন্তু কয়েকদিন আমাকে চুপচাপ বই পত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখে, আর আমার সাথে কথাবার্তা বলে, মামি আমার ভূয়সী প্রশংসা করা শুরু করলেন।

মামির খুব মিষ্টি, আন্তরিক কণ্ঠস্বরে করা প্রশংসাগুলো আমার আত্মবিশ্বাসের পাল ফুলিয়ে মেলে দিল । তারপর আজ ২৪ বছর হয়ে গেছে, এখনো সেদিনের কথা ভাবলে মোটিভেশন পাই।

বড় হবার সাথে সাথে মামির প্রশংসা বাড়তেই থাকে। মামা স্পেনে থাকতেন, মামিও মুভ করলেন কিছুদিন পর। ফোনে খোঁজ নিতেন। প্রশংসা করতেই থাকতেন। সবাইকে বলতেন, রবি (আমার ডাক নাম) অনেক স্পেশাল।
মামির বড় ছেলের নাম আমার আর আমার ছোট বোনের নামের সাথে মিলিয়ে, ধ্রুব রাখলেন। আমাদ্রে নাম রবি-শশী, আর ধ্রুবতারা থেকে ধ্রুব।

ফিল্মমেকার হবার পথে মামির অপ্রত্যাশিত সাপোর্ট

আমার ফিল্মমেকিং এর আগ্রহ নিয়ে আমার বাসায় কারো তেমন আগ্রহ ছিলো না। খুব ডিপ্রেশনে দিন কাটতো। স্পেন থেকে বেড়াতে আসার সময় মামি একটা ছোট ক্যামেরা নিয়ে আসলেন, যেটাতে কয়েক মিনিটের ভিডিও করা যেত। আবারো সাহস পাই, ছোট্ট গ্লাসের মাঝে জিইয়ে রাখা ছোট্ট মাছের মত নিজের স্বপ্নটাকে জিইয়ে রাখি। একদিন সত্যি সত্যি ছোট মাছ বিশাল তিমি হয়ে ওঠে, পা রাখি লন্ডনে, ফিল্মের ছাত্র হিসেবে।

যখন আমার দুর্দিন আসে, স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হই, মামি হতাশা দেখাননি। আমার অক্সফোর্ড গ্র‍্যাজুয়েট কাজিনকে তিনি যতটা পারদর্শী ভাবেন, তাঁর চাইতেও আমাকে নিয়েই তাঁর বেশি প্রত্যাশা! এ কেমন বিশ্বাস?

জানিনা কি কারণে মামি এতটা করতেন আমার জন্যে। অদৃশ্য একটা মায়ার বাঁধন, যেটার এক প্রান্ত এখন পরপারে। আরেক প্রান্তে আমার রক্তাক্ত হৃদয়।

মামির বই পড়ার নেশা

মামা মামির আরেকটা ছেলে হয়, মুস্তাকিম। একসময় লন্ডনে মুভ করেন। তাদের বাসায় যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। মামি দেশ থেকে প্রচুর বই নিয়ে আসতেন। প্রিয় কবি বোধহয় হেলাল হাফিজ। হুমায়ুন, শীর্ষেন্দু, সমরেশ, সুনীল, বিভূতিভূষণ, শরৎ সহ আরো অনেক অনেক লেখকের বই পড়েছেন। ইংরেজি অনুবাদও হয়তো পড়তেন, তা নিয়ে বেশি আলাপ হয়নি।

মামা দেশে আসলেই মামি একটা বইয়ের লিস্টি দিয়ে দিতেন। কোনোটা সেই লিস্টি থেকে মিস হয়ে গেলে, ফোন করে বলতেন, এগুলোও নিয়ে এসো।

আমার বাবার ফেসবুকে লেখা স্ট্যাটাসগুলিতেও মামি উৎসাহ দিতেন।

তাদের বরিশালের বাড়িতে একটা চিলেকোঠা ছিল। সেই চিলেকোঠায় উঠতে হত কাঠের তৈরি একটা হেলানো সিঁড়ি চার হাতপায়ে বেয়ে। যতদূর মনে পড়ে, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যেত না। কিন্তু আরাম করে বসে বই পড়া যেত। বইপোকা মিতু মামি নিশ্চয়ই লন্ডনে বসে অনেক মিস করেছেন সেই জায়গাটা। হয়তো আরেকবার যেতে চেয়েছিলেন। তা আর হলো না।

আমার মামা আর দুই ভাইয়ের সাথে এখনো কথা হয়নি। কি বলবো এখনো জানি না।

মামির চলে যাওয়া

একটা খারাপ অসুখ ধরা পড়ে মামির আরো বেশ কবছর আগে। একটু একটু করে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছিল। এর মাঝেও মামির ভাই – আমার তুহিন মামা, ও বোন – তুলি খালা, মামির বাবা মাকে নিয়ে মামি খুব ভাবতেন। মামির ছোট বোন – আমার তনা খালা, অল্প বয়সে মারা যান – তাকেও মামি খুব মিস করতেন।

মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তবু আমরা দীর্ঘজীবী হই অন্যের মনে জায়গা করে নিয়ে। মিতু মামি চলে গিয়ে আমাকে শেষবারের মত মনে করিয়ে দিলেন। আজীবন তাঁকে মনে রাখবো, আমার ওপর রাখা তাঁর গভীর আস্থা আর বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে যাবো।
আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে মামির অনেক অবদান। কোনদিনই ভুলবার নয়। কোনদিনই না।

আল্লাহ্‌ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন। মামি হয়তো সেখানে সেই চিলেকোঠাটা পাবেন, তাঁর প্রিয় বইগুলি পাবেন। কোনোটা লিস্ট থেকে মিস হবে না। পাশে থাকবে এক কাপ কফি, যাতে একটা এক্সট্রা Kopiko ক্যান্ডি দেয়া থাকবে। মিতু মামি বসে বসে আয়েশ করে পড়বেন। পৃথিবীর কোন অসুখ তাঁকে আর কখনো স্পর্শ করবে না।

সবাই তাঁর জন্যে দোয়া করবেন।

And please don’t take people close to you for granted. Get in touch and appreciate them, before you miss the chance forever.